কোন শিক্ষা মানবের মনস্তাত্বিক বিবর্তনে বেশী কার্যকরী ইবলিসের না কি আলেমদের ?
প্রিয় ইহলৌকিক জীবনের সহযাত্রীবৃন্দ ,
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
আমার খুব আফসোস হয় যখন দেখি,
আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরআনের মত এক নিষ্ঠ পরস্পর বিরোধী মন্তব্য বিবর্জিত, মানব সৃস্টির পূর্ব থেকে দুনিয়া নশ্বর হওয়ার শেষ অবধি , সর্বকালের সর্বজ্ঞানে ভরপূর দিক নির্দেশনা থাকার পরেও , মানুষ ইবলিসের প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে আলেমদের তথা কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
অথচ ইবলিসের সরাসরি কোন তাত্বিক পান্ডুলীপি নেই , যা পড়ে বা বুঝে মানুষ আল্লাহর প্রদর্শিত স্থায়ী পথের বিপরীতে অশান্তি ও যন্ত্রনাদায়ক জেনেও নিশ্চিত জাহান্নামের পথে আকৃষ্ট হতে থাকে ।
তখনই চিন্তা করি :
১। কিভাবে তা সম্ভব হল ?
২। তাহলে ইবলিসের শিক্ষার ও শিখানোর ধরণ কি ?
৩। আর যুগ যুগান্তরে আলেমরাই বা মানুষকে কি শিক্ষা দিল ?
৪।পীর সাহেবরা মুরীদদের কি বানাল ও শিক্ষা দিল ?
৫। এত বিশাল দুনিয়ায় অগনিত মানুষের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বা কি শিক্ষা দিল ?
তাহলে ধরে নেই ইবলিসের ও আমাদের প্রচলিত শিক্ষার ধরণ ও প্রশিক্ষন পদ্ধতিই আলাদা ।
আজকের আলোচনার মূল বিষয়টি আল্লাহকে হাজীর নাযির করে আলোচনা করতে চাই ।
ক) মৌলিক শিক্ষা : জাতিগত ভাবে আল্লাহ মানুষকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল করে সৃস্টি করেছেন অথচ সেই মানুষকে সৃস্টির সেরা জীব ঘোষনা দিয়ে অন্য সকল জীবকে মানুষের নিয়ন্ত্রনাধীন করে দিলেন ।
সাথে মৌলিক শিক্ষার উপকরণ কোরআন দিলেন এবং মৌলিক বুনিয়াদি জ্ঞান নফস সংযোজন করে দিলেন যার দ্বারা কোরআন রপ্ত বা আত্নীকরণ করা যায় ।
অথচ
১। ইবলিস মানুষের সেই আসল জায়গাটিও
তথ্যসন্ত্রাসের মাধ্যমে দখল করে নিল ।
২। ইবলিস মানুষের নফসের উপরে কুশিক্ষার রেখাপাত করে এবং তা প্রতিনিয়ত স্বরণ করিয়ে দেয় ।
৩। “হারাম কাজে আরাম বেশী” এরূপ ধারনার বশে বশীভূত হয়ে , কোরআনের অসমর্থিত রোমাঞ্চকর কাজে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করতে থাকে ।
৪। অন্যায় কাজের মাধ্যমে , অন্যায়ভাবে অর্জিত সম্পদের দ্বারা আমোদ ফুর্তিতে ব্যাস্ত রাখে ও সেই সাথে জ্যামিতিক প্রকৃয়ায় সহযোগী , সহবস্থানের বিস্তার লাভ করে ।
এটা একটি জ্যামিটিক বন্ধনের ধরণ দেখানো হল। যেখানে প্রতিটি বাহুই প্রকাশ্যভাবে স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ এবং দ্রূত বিস্তার লাভ করে ।
৫। ইবলিসের কৌশল মৌমাছির কৌশলের মত সংঘ বদ্ধ বিধায় , স্বার্থের টান সুদৃঢ় করে রাখে বিধায় অন্যায় জেনেও একে অন্যকে অন্যায়ভাবে সাপোর্ট করে । কারণ ততক্ষনে ন্যায়ের মৌলিক চিন্তাকে অন্যায়ের আবারনে আবদ্ধ করে ফেলে ।
খ) পক্ষান্তরে আমাদের কোরআনের শিক্ষা ব্যবস্থা বিস্তার লাভের বিপরীতে সংকোচন নীতিতে পরিনত হচ্ছে । কারন :
১। এখানে সরাসরি কোন স্বার্থ সিদ্ধির কথা বলা হয় না বরং মৃত্যুর পরে কি নেয়ামত লাভ করবে তা নিয়ে প্রলুব্ধ করা হয় । যাতে দুর্বল মনস্তাত্বিক মানুষ সহসা আস্থা হারিয়ে ফেলে। ।
২। এখানে রোমাঞ্চকর পরিবেশের অভাব বিধায় অগভীর মনস্তাত্বিক মানুষ যেমন , শিশু ও মহিলারা তাতে কম প্রলুব্ধ হয় ।
৩। শিক্ষা ও প্রশিক্ষন ব্যাবস্থাও ক্ষনকালীন , অসমর্থিত এবং শিক্ষার্থী দমন নীতিতে ভরপূর ।
যেমন :
** পীর সাহেব চান না যে তার মুরীদ সমকক্ষ
পীর হোক ।
** ওয়াজি , ঈমাম ও শিক্ষকরা চান না যে তার অনুসারীরা সহসাই তার মত বা তার চেয়ে বড় শিক্ষক হোক ।
৪। এই শিক্ষন প্রকৃয়া গানিতিক আকারে সম্প্রসারন করে যা জ্যামিতিক প্রকৃয়ার চেয়ে ধীরগতি সম্পন্ন ।
৫। গানিতিক প্রকৃয়ায় বিস্তার করা
শিক্ষার্থিদের বন্ডিং স্ট্রংগার নয় বরং অনেকটা আইসোল্যাটেট নীতি । যাতে করে সম্মিলিত মানুষ সংখ্যায় বেশী হলেও শক্তিতে দুর্বল । যেমন বাসের মধ্যে অনেক যাত্রী থাকলেও শক্তিতে অনেকাংশেই ড্রাইভার -হেলপারের সংঘবদ্ধ শক্তির তুলনায় কম ।
৬। ছবিতে একটি সিনেমা হলের ও একটি মাহফিলের সদৃশ ছবির দ্বারা দুই ধরনের শিক্ষার পার্থক্য তুলে ধরা হল ।
উপদেশ
১। বিস্তার প্রকৃয়ায় জ্যামিতিক পদ্ধতি অনুস্বরন করতে হবে । বিজ্ঞানের যুগোপযোগী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ।
২। সকল শিক্ষকদের মনোন্নয়ন করতে হবে , তার সকল শিক্ষার্থীও যেন পরবর্তী ধাপে সকলেই কোরআনের খাদেম ও শিক্ষক বনে যেতে পারেন ।
৩। মানবতা ও সাম্যতা বিধানের সকল উৎকর্শ কাজে লাগাতে হবে যেন কোন মানুষ অন্যায়ের শিকার না হয়, কর্ম বিমুখ না থাকেন । ন্যায় সংগত কাজের পুরুস্কার দিয়ে আকৃষ্ট করতে হবে ।
৪। নেতৃস্থানীয় মানুষের মধ্যে কোরআন অধ্যায়নের সুযোগ করে দিতে হবে এবং আস্তে আস্তে কোরআনের আমল সর্বস্তরের মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে হবে ।
এভাবে একাগ্রচিত্বে কাজ করলে কোরআনের আইন হতে পারে বিশ্বময় । বিশ্ব হতে পারে শান্তিময় ।
আমীন
আহমেদ জাফর
No comment